কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ?
একদিন দস্যু রত্না কর জঙ্গলের মধ্যে বসে এক গাছের নিচে সে রাম নাম জপ করছিল | এই রাম নাম জপে জপতে সে এতটাই মগ্ন ছিল যে তার গায়ে কিছু উঠছে কিনা সে টের পাচ্ছিল না এভাবে ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে তার গায়ে ওই পোকা বাসা বাড়তে শুরু করল| এবং সেই উইপোকার মাটিতে তার গা পুরো ঢেকে গেল মাথা পর্যন্ত| দস্যু রত্নাকর সেটাও পর্যন্ত টের পায়নি| তখন প্রজাপতি ব্রম্মা তার জব শুনে স্বর্গ থেকে মর্ত ধামে এসেছিলেন | এবং তিনি ইন্দ্রকেও ডেকেছিলেন ইন্দ্র এসে তখন তাকে জিজ্ঞেস করলেন ইন্দ্র দেবের কাছে যে আমাকে ডাকার কারণ কি ?তখন প্রজাপতি ব্রহ্মা বললেন যে এখান থেকে রাম নাম আসছে সেটা হলো দীর্ঘ ৭০০০ বছর ধরে রাম নাম জপ করতে করতে দস্যু রত্নাকর গায়ে ওইয়ের মাটিতে ভরে গেছে |তাই ইন্দ্রদেব কে বললেন যে আপনি সাত দিন ধরে টানা এমন বৃষ্টিপাত আরম্ভ করুন যাতে এই উই এর মাটি গলে নতুন রত্নাকরের জন্ম হয়| তখন প্রজাপতি বললেন ঠিক আছে| তখন প্রজাপতি ব্রহ্মা রত্নাকর কে দেখতে পেয়ে ডাকতে থাকলেন রত্নাকর তখন রত্নাকর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন প্রণাম প্রজাপতি ব্রহ্মা |তখন প্রজাপতি ব্রমা বললেন যে দীর্ঘ সাত হাজার বছর ধরে এই এক জায়গায় বসে রাম নাম জপ করার ফলে তোমার সমস্ত পাপ নষ্ট হয়েছে তুমি আজ থেকে সমস্ত পাপ মুক্ত হয়েছো |অর্থাৎ উইপোকার ঢিবি থেকে রাম নাম জপ করে বেরোনোর পর দস্যু রত্নাকরের একটা নবজন্ম হয়েছে তাই তার নতুন কর্মজীবনের সাথে সাথে তার নতুন নামও হবে| এই নতুন জন্ম দিয়ে আপনি আমার কাছে গুরুদেব হয়েছেন তাই আপনি নিজেই আমাকে নতুন নামকরণ করবেন। আপনি আমার কাছে গুরুদেব| তোমার এই নতুন জন্ম হয়েছে কোন মাতৃগর্ভ থেকে হয়নি| তোমার এই জন্ম হয়েছে ওই জিপির ভেতর থেকে| তাই তোমার নতুন নাম হলো বাল্মিকী মনি|
রাম নামের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা 🙁কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ? )
তখন প্রজাপতি ব্রম্মা বাল্মিকী মনিকে বলল রাম নামের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে হলে সবার প্রথমে তোমাকে রামায়ন রচনা করতে হবে| এই রামায়ণে সিরামের জীবনী ও কীর্তি বর্ণনা করতে হবে এই সেই রামায়ণ পড়ে সমগ্র পৃথিবীবাসী রাম মাহাত্ম্য জানবে| তখন বাল্মিকী মনি বললেন আমি যে একজন মূর্খ মানুষ আমি কি করে এই এত বড় রামায়ণ রচনা করব| তখন প্রজাপতি ব্রহ্মা বললেন মা পুত্র তুমি চিন্তা করো না দেবী সরস্বতীর স্বয়ং নিজে এসে তোমার জিব্বার ওপর বসবে তুমি শুধু শুদ্ধাচারী হয়ে থেকো| তখন বাল্মিকী বুনি বললেন ঠিক আছে প্রভু, তাই হবে|
ভরদ্বাজের আগমন বাল্মিকি মনি কাছে 🙁কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ? )
হঠাৎ একদিন সকালবেলায় ভরদ্বাজ বাল্মিকি মনির কাছে আসলেন| তখন যথারীতি বাল্মিকী মুনি কে জিজ্ঞেস করলেন এত সকালে আপনি আমার এখানে কি মনে করে| তখন ভরদ্বাজ বললেন আজকে সকালবেলায় আপনার স্বপ্ন দেখেছিলাম খুব চিন্তিত মনে হল আপনাকে, তাই সকাল সকালে আপনার এখানে চলে আসলাম।| আমিসংসার ত্যাগী তাই বন্ধনহীন মানুষ আমার চিন্তার কোন কারণ নেই সে আমি জানি গুরুদেব তবুও ভাবলাম যদি কোন শারীরিক গোলযোগ দেখা দিয়ে থাকে ,ভরদ্বাজ যদিও তুমি আমার শিষ্য তবু জন্মবিযারে আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড় ভুলে যেওনা দীর্ঘ 60000 বছর তপস্যার শেষে সবেমাত্র কদিন আগে আমি নবজন্ম লাভ করেছি| আপনার রসিকতা ও আপনার মতন অতি কমল গুরুদেব| তা হয়তো হবে ভারত কিন্তু কোমল রসিকতা তো আমার জীবনের লক্ষ্য নাই| কিভাবে যে আমি প্রভুর আদেশ পালন করব তা আমি বুঝতে পারছি না কিন্তু এভাবে বসে থাকতে থাকতে আমি তো কিন্তু ক্লান্ত হয়ে উঠছি প্রভু যখন আদেশ দিয়েছেন তবে তা পূরণের পথও প্রভুই দেখাবেন| গুরুদেব আপনি নিজেই তো বলেন আমরা কখন কি করবো আর কখন কি বলবো সবই পূর্ব নির্ধারিত| তাহলে আপনি এটাই ভাবুন না তবে আপনি যা এই মুহূর্তে কিছু করছেন না বলে কষ্ট পাচ্ছেন সেটাও ভবনের ভগবানের ইচ্ছা তাইতো ভাবার চেষ্টা করছি সব সময় তবুও মাঝে মাঝে ঠিক আছে আর কোন চিন্তা করবেন না|
নারদ প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গেলেন 🙁কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ? )
এবং তাকে বলতে লাগলেন যে প্রভু বাল্মিকী মুনিত খুব চিন্তিত হয়ে পড়ছেন কিভাবে তিনি আপনার দেওয়া এত বড় দায়িত্ব পালন করবেন| কিন্তু আপনি তো জানেন প্রভু সময়ের আগে কিছুই হওয়ার সম্ভব নয় কিন্তু আর কতদিনের অপেক্ষা প্রভু, |প্রভু নারায়ণের নতুন রূপের লীলা বর্ণনা শোনার জন্য আমি যে অধীর আগ্রহে বসে আছি|আরেকটু ধৈর্য ধরুন যে বলছি নারদ সময় সমাগত হয়েছে প্রায়|} ঠিক আছে আমি প্রতীক্ষা করবো|
বাল্মিকী মনে এবং ভরতদারের কথাবাত্রা 🙁কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ? )
একদিন বাল্মিকী মনিএবং ভরদ্বাজ একসঙ্গে নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন| দুজনের স্নান হয়ে যাওয়ার পর তারা বলতে থাকলেন যে এই জলটি কি ঠান্ডা এই জলে স্নান করার সাথে সাথে শরীরের সাথে সাথে মন শান্ত হয়ে যাবে| ও পবিত্র হয়ে যাবে তখন বাল্মিকী মনে ভারতবর্ষকে বললেন যে ভরত দাস তুমি কমান্ডো ভর্তি করে জল নিয়ে মন্দিরে ফেরো| আর আমি সরোবরের স্নান করে আসছি বেশ তাই করুন আপনি স্নান করে নিন স্নানের আগে আমি একটু ওই দিকটায় ঘুরে দেখে আসব তোমার কাজ হয়ে গেলে তুমি স্কুটিরে ফিরে যেও তারপর এই কথা বলে ভরত দাশ কুটিরে ফিরে গেলেন। খুটিরে ফিরে যাবার সময় তিনি দারুন ফুলের বাগান দেখলেন এবং এই ফুলের বাগান দেখে ওনার মন আনন্দে ভরে উঠলো| আর বলতে লাগলেন যেমন সুন্দর গন্ধ তেমনি সুন্দর দেখতে| তারপর ভারতের যখন সেই বাগানের ভেতর দিয়ে ফিরছিলেন তখন এক শিকারি সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বোনের গাছে একটি পাখিকে বসে থাকতে দেখে সেই পাখিটিকে তীর মারলেন এবং পাখিটির গায়ে তীর লাগার পর পাখিটি উড়ে তার মায়ের কাছে গেল এবং তার কাছে গিয়ে পোস্টেই সেই পাখিটির গাছের ডাল থেকে পড়ে গেল মাটিতে। তখন সেটা ভরত দাস দেখতে পেলেন। এবং বললেন কোন দুরাচারী এই কাজ করেছে| প্রকৃতি তোকে কত যত্ন করে সৃষ্টি করেছে,, কোন নরাধমের এত সাহস হয় যে তোকে তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে আলাদা করে দিল তোর এরকম কান্না দেখে কোন প্রচন্ড এত আনন্দ শুধু তাই নয়হচ্ছে| তখন সেই শিকারির তার সামনে আসলো আর ভরত দাস তাকে বললেন তাহলে পাপিষ্ঠ তুই এই কাজ করেছিস| কি আনন্দ পেলে এই যুগল দুটি কে আলাদা করে দিয়েঅপরাধ নেবেন না মনেবর বন্যপ্রাণী হত্যা করায় যে শিকারির ধর্ম| বন্যপ্রাণীকে হত্যা করা তোর ধর্ম মনিবর বললেন| নিজের পাপ কাজকে ধর্মের নাম দিতে চাচ্ছিস পাপিষ্ট| এটাই যদি তোদের ধর্ম হয় তাহলে আজ আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি সমাজে কোনদিনও তোরা উচ্চপদ মর্যাদা লাভ করতে পারবি না|
বাল্মিকী মনির পুনরায় ভরদ্বাজ এর কাছে আগমন 🙁কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ? )
ভরতদার যখন পুনরায় বাল্মিকী মনের কাছে আসলেন তখন বাল্মিকী মনে জিজ্ঞেস করলেন গুরুদেব কি হয়েছে এত দ্রুত আবার আপনি ফিরে আসলেন| তখন ভরত দাস বললেন খুব খারাপ একটা ঘটনা ঘটেছে| কি ঘটনা গুরুদেব বনের মধ্যে এক নিশাত পুত্র তীরবিধ করে হত্যা করলেন এক পাখিকে আমি রেগে গিয়ে তাকে অভিশাপ করেছি, তাতে কি হয়েছে গুরুদেব অন্যায়ের শাস্তি তো তাকে পেতেই হত| তা হয়তো তুমি ঠিকই বলছ কিন্তু অভিশাপটা আমার মুখ থেকে সংস্কৃতে বের হলো, এবং সেটি ছিল খুব ছন্দময় পণ্য | সমান নয় বিশিষ্ট এবং গান গাইবারযোগ্য এটাই কি তাহলে শ্লোক ভরদ্বাজ তবে পরবর্তীকালে কি এটাই শ্লোক রূপে পরিচিত হবে| আমারও তো তাই মনে হচ্ছে গুরুদেব|। একেই তাহলে বোঝায় শ্লোক বলা হয়।
নারদ এর প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে আগমন :-(কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ? )
নারদ প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গিয়ে বললেন নারায়ন নারায়ন হে প্রভু বাল্মিকী মনের মুখ থেকে তো শ্লোক নির্গত হচ্ছে।| এবার তো তাহলে তিনি চাইলেই রামায়ণ রচনা করতে পারবেন। ঠিক বলেছেন দেবর্ষি কিন্তু রামায়ণ বর্ণনা করার ক্ষমতা জন্মালেও বাল্মিকী মনে এখনো সিয়ামের জীবনী ও তার কার্যকলাপ এবং আর তার অনুষাঙ্গিক অনেক ঘটনা লেখার জন্য উপযুক্ত হয়নি। তখন নারদ মনি বললেন তা অবশ্য ঠিক বলেছেন গুরুদেব তাই এবার আপনাকে দায়িত্ব নিয়ে রামায়ণের ঘটনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে বাল্মিকেরা লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে| যথা আজ্ঞা প্রভু নারদ বললেন এদিকে কঠিরে বসে বাল্মিকী মনে একের পর একশ লোক নিজের মুখে বলতে লাগলেন| |
নারদ এর বাল্মিকী মনের কুঠিরে প্রবেশ 🙁কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ? )
নারদ বাল্মিকী মুনির কুঠিরে প্রবেশ করে বাল্মিকী মনে কে ডাকলেন বাল্মিকী মনি তখন বাল্মিকী মনি বলে উঠে বসছেন আরো আপনি আমার কুঠিরে| এবং বাল্মিকী মনে গিয়ে তার পা ছড়িয়ে প্রণাম করলেন। আর বললেন আসুন গুরুদেব বসুন| তারপর তারপর বাল্মিকী মনে নারদকে বললেন যে প্রভুর আদেশ রামায়ণ আমাকে লিখতে হবে শ্লোকের মাধ্যমে কিন্তু আমি এ কাজ কিভাবে করব সেটা বুঝতে পারছি না কিন্তু আজ সকালের সংস্কৃতি আমার মুখ থেকে ছন্দ নির্গত হয়েছে লয় পূর্ণ এর অর্থ আমি জানিনা কিন্তু একে কি শ্লোক বলে দেবর্ষি তখন দেবর্ষি নারদ বললেন ঠিকই বলেছেন বাল্মিকী মনি, এটা কি শ্লোক বলা হয়। কিন্তু এর অর্থ পর্যন্ত আমি বুঝতে পারছি না ঠিক এরকম ভাবেই একের পর এক লোক লিখে তুমি রামায়ণ রচনা করবে আর সেই রামায়ণের কাহিনী আজ আমি তোমাকে বলবো|
বাল্মিকী মনের কাছে নারদের রামায়ণ বর্ণনার কাহিনী 🙁কিভাবে দস্যু রত্নাকর ধীরে ধীরে বাল্মিক মুনি হয়ে উঠলো ? )
সূর্যবংশ রাজা দশরথের কোলে স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু রাম নামে জন্মগ্রহণ করেন রাবনকে বধ করার জন্য তিনি ধরাধামে মানব অবতার হিসেবে আবির্ভূত হন| এই হল শ্রী রামের আখ্যা| কিন্তু সে তো বুঝলাম নারুত মনি কিন্তু আমি কিভাবে এর কাহিনী লিখবো সেটা তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।, কিন্তু ভয় লাগছে প্রভু যদি আমি কিছু ভুল লিখে ফেলি| তখন নারদ মনি বললেন ভুল হবার কোন সুযোগই নেই। তুমি শ্লোকের মাধ্যমে যা লিখবে, তাই অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হবে। আমার মুখে তুমি যা যা ঘটনা শুনলে তুমি তাই ঘটনার সুন্দর করে সাজিয়ে লিখলে এবং তাছাড়াও যেসব ঘটনা তুমি এখনও পর্যন্ত জানো না সেসব ঘটনা তুমি তুমি এমনিতেই সব জানতে পারবে আর একটা কথা অবশ্যই মনে রেখো, যতদিন পৃথিবীতে পাহাড় নদী আকাশ গিরিখাত রয়েছে ততদিন রামায়ণের গল্প লোকের মুখে মুখে প্রচলিত হবে আর যতদিন পৃথিবীতে রামায়ণ থাকবে ততদিন তোমার নাম মানুষের মনে সর্বদা জ্বলজ্বল করবে| ঋষি বাল্মিকী গঙ্গার তীরে স্নান করে সূর্যকে প্রণাম করে ফিরে গেলেন নিজের কুঠিরে তারপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ে শুরু করলেন রামায়ণ রচনা এইভাবে বাল্মিকী মনি ২৪ হাজার স্লোক ৫০০ স্বর্গ ও সাত কান্ড তথা উত্তর কান্ড রচনা করে রামায়ণ রচনা করলেন। এটাই ছিল আজকের রত্নাকর দোস্যুর বাল্মিকী মুনি হয়ে ওঠার গল্প|