কি করে ডুবল শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী ?
দ্বারকা এমন একটি ধার্মিক নগরী যেটি শ্রীকৃষ্ণ নিজে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন | হিন্দু ধর্মে দারোকা নগরীরকে সপ্তম সব থেকে প্রাচীন নগরী হিসেবে মনে করা হয় | বাকি ছয়টি নগরী হল –
- মথুরা
- কাশি
- হরিদ্দার
- কাঞ্চীপুরম
- অযোধ্যা
- অবন্তিকা
কিছু লোক দ্বারকাকে দাঁড়াবতী কুশাস্থলী আনর্তক অন্তি তারকা উখা মন্ডল অন্তর দ্বীপ প্রাণ দূর্গ নামেও চেনে এই শহরের চারিপাশে বড় বড় উঁচু দেওয়াল উপস্থিত যেখানে একাধিক দোয়ার ছিল এই দারোকা শহরটি কিন্তু সবার মনে এমন একটি প্রশ্ন আসে যে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর এমন কি হয়েছিল যে এই দ্বারকা শহরটি জলের নিচে ডুবে যায় | আজকের এই প্রবন্ধে আপনাদের সকলের মনের সেই প্রশ্নের উত্তর আপনারা পেয়ে যাবেন দ্বারকা শহরটি জলে ডুবে যাওয়ার কারণ নিয়েই আজকের এই প্রবন্ধটিতে আলোচনা করব |কি করে ডুবল শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী ? দারোকা শহরটি কবে এবং কিভাবে ডুবল সমুদ্রের নিচে ?
দারোকা শহরটি কবে এবং কিভাবে ডুবল সমুদ্রের নিচে ?
( কিভাবে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা নগরী প্রতিষ্ঠা করলেন, কেন শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা নগরী প্রতিষ্ঠা করলেন )এই দারোকা নগরটিকে শ্রীকৃষ্ণের বাসস্থান ও বলা হয়ে থাকে মহাভারতে উল্লিখিত কথা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ যখন মামা কংসকে বদ করলেন তখনই জলাসান্ত শ্রীকৃষ্ণের ও যদু বংশের বিনাশ করার সিদ্ধান্ত নেন | সুযোগ পেয়েই জলশান্ত বারে বারে যদু বংশীয় লোকেদের উপর আক্রমণ চালান এবং ধীরে ধীরে তার অত্যাচার বাড়তে লাগলো | এবং এই যদু বংশের কল্যাণের জন্য শ্রীকৃষ্ণ মথুরা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মথুরা থেকে বেরিয়ে তিনি এমন একনগরের প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি বিশাল এবং সুসংগঠিত এক শহরের প্রতিষ্ঠা করলেন যেটার নামই ছিল দারোকা নগরী | কি করে ডুবল শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী ? দারোকা শহরটি কবে এবং কিভাবে ডুবল সমুদ্রের নিচে ?
ধার্মিক গ্রন্থ অনুসারে বলা হয়ে থাকে শ্রীকৃষ্ণ তার ছোটবেলার বন্ধুদের সাথে খুব আনন্দের সাথে সেখানে বসবাস করছিলেন সময় ধীরে ধীরে এগোতে লাগলো একইভাবে ৩৬ বছর পর্যন্ত রাজত্ব করার পর এবং শ্রীকৃষ্ণ মৃত্যুর পর দারোকা নগরী সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যায় | পৌরাণিক গ্রন্থ অনুসারে এই দারোকা নগরী জলের তলায় তলিয়ে যাওয়ার জন্য পিছনে দুটি মতবাদ রয়েছে | কি করে ডুবল শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী ? দারোকা শহরটি কবে এবং কিভাবে ডুবল সমুদ্রের নিচে ?
- দারোকা নগরী জলের তলায় তলিয়ে যাওয়ার কারণ : প্রথমত মাতা গান্ধারী শ্রীকৃষ্ণ কে দেওয়া অভিশাপের ফলে সেই অভিশাপ কার্যকারী হলে এই ঘটনাটি ঘটে |
- দারোকা নগরী তলিয়ে যাওয়ার কারণ : ঋষিদের দ্বারা দেওয়া অভিশাপ কথা অনুসারে মহাভারতের শেষে কৌরবদের পরাজিত করার পর যখন যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরের রাজ তিলকের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন কৌরবদের মাথা গান্ধারী তার একশত পুত্রের মৃত্যুর জন্য শ্রীকৃষ্ণ কে দায়ী করেন এবং অভিশাপ দেন যে যে প্রকার তুমি কৌরবদের বংশের বিনাশ ঘটিয়েছো সেই প্রকার তোমার যদু বংশের ও বিনাশ ঘটবে |
- অভিশাপে দারোকা নগরী জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছিল : গ্রন্থানুসারে মহাভারত যুদ্ধের ছত্রিশ বছর পরেই তারকা নগরীতে বিভিন্ন অমঙ্গল জনক ঘটনা ঘটতে থাকে তখন একদিন ঋষি বিশ্বমিত্র নারদ প্রমুখ সাত জন ঋষিগণ তারকাতে যেত এবং সেই সময় যৌথ বংশের যুবকেরা সেই মুনিঋষিদের নিয়ে অনেক রকম হাসি ঠাট্টা করত তারা শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্ম কে সামনে নিয়ে গেলেন এবং বললেন এই ঋষি গর্ভবতী তখন তিনিই সেই সত্যতা যাচাই করার জন্য ধ্যান করতে লাগলেন তখন সেই মনিষীরা জানতে পারলেন এই স্ত্রী আসলে একজন পুরুষ তখন তারা খুব রেগে গেলেন এবং তখন মনিষীরা কিশোরদের বললেন তোমরা আমাদের অপমান করেছ এজন্য শ্রীকৃষ্ণের এই পুত্র লোহার মুশলকে জন্ম দেবে আর এই মুসালোই হবে তোমাদের বংশের ধ্বংসের কারণ |
আর এই মুসলের হাত থেকে কেবলমাত্র শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরামি মুক্তি পাবেন পরে যখন শ্রীকৃষ্ণ এই কথা জানতে পারেন তখন তিনি একথা বললেন ঋষিদের এই কথা অবশ্যই সত্য হবে বিশ্বামিত্রের অভিশাপের দ্বিতীয় দিন পর সাম্য মুশলের জন্ম দিলেন যখন এই কথা রাজা উগ্রসেন জানতে পারলেন তখন তিনি মুষলটিকে নিয়ে সমুদ্রের নিক্ষেপ করলেন তখন শ্রীকৃষ্ণ এবং উগ্রসেন দুজনে মিলে রাজ্যে নগরবাসীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে দিলেন যে তারা কখনো আর নিজের বাড়িতে মাদক জাতীয় পদার্থ উৎপন্ন করবে না | যদি কেউ মাদকদ্রব্য পান করেন বা বাড়িতে মাদকদ্রব্য তৈরি করেন তবে যদি কেউ ধরা পড়ে তবে তার মৃত্যু নিশ্চিত | এই ঘোষণা শোনার পরেই দারোগাবাসী মাদকদ্রব্য না বানা বার সিদ্ধান্ত নিলেন | কি করে ডুবল শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী ? দারোকা শহরটি কবে এবং কিভাবে ডুবল সমুদ্রের নিচে ?
তারপর থেকেও দারোকাতে চরম অনৈতিক কাজ গুলি ও অভিশাপের প্রলক্ষণ দেখা দিতে লাগলো যত রকম অমঙ্গল কাজ আছে সেখানে ঘটতে লাগলো | প্রতিদিন সেখানে ঝড় হতে লাগলো এবং ইঁদুরের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেল যে মানুষজনের থেকে ইদুরকে বেশি সেখানে দেখা গেল | এই সময় যদু বংশীয়দের পাপ করতে ও বিধায় বাধ্য না দারোকার এই করুণ অবস্থা দেখে শ্রীকৃষ্ণ বুঝে গেলেন যে কৌরব মাতার গান্ধারীর অভিশাপ এবার বাস্তবে সত্য হতে চলেছে | এই সময় শ্রীকৃষ্ণ যদু বংশীয়দের তীর্থযাত্রা করার পরামর্শ দিলেন | শ্রীকৃষ্ণের আদেশ পেয়ে যদু বংশীয়রা সমুদ্রের নিকট বসবাস করতে লাগলেন প্রবাসিত্বে বসবাস করাকালীন একদিন সাধ্যকি মজার ছলে কিত বর্মার উপহাস করেন কিতো বর্মা ও মজার ছলে এমন কিছু কথা বলেন যে তাতে সাধ্যকি রেগে যান কি তোমার মাকে আক্রমণ করে ফেললেন এবং সেখানে নিহত করে ফেললেন এ দেখে সকলেই রেগে যান এবং সার্থকিকে আক্রমণ করেন স্বার্থকিকে একা দেখে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র পদ্যোগী সেখানে তাকে বাঁচাতে জান এবং সাধ্য কি ও পদ্যোগী একাই তাদের সাথে লড়াই করেন সংখ্যায় বেশি হওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে তারা লড়াই করে পরাজিত করতে পারলেন না | অবশেষে তারা মৃত্যুবরণ করলেন | নিজের পুত্র সন্তানের মৃত্যের কথা শুনে ও সার্থকির এভাবে মৃত্যু হয়েছে বলে জানার পর শ্রীকৃষ্ণ নিজের হাতে একমুঠো মাটি থেকে দুব্বা ঘাস তুলে নিলেন | ঘাসটি তার হাতে আশা মাত্রই তা মুশারে পরিণত হয়ে গেল এবং শ্রীকৃষ্ণের যখনই ঘাস তুলত তখন ঐ তা মুসালে পরিণত হতো মুসলের একটি প্রতিঘাতেই মানুষের যখন তখন মৃত্যু হতে পারত ফলে তাদের মনের মধ্যে এক অশান্তির সৃষ্টি হয় এবং যদু বংশীয়রা একে অপরকে সেই মুষল দিয়ে আঘাত করে মারতে লাগলো এভাবে যদু বংশ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকেও বিনাশের দিকে এগোতে লাগলো।
শ্রীকৃষ্ণের চোখের সামনেই সকলের মৃত্যু হতে লাগলো এরপরে শ্রীকৃষ্ণ বলরাম জিকে ওই স্থানে থাকার কথা বলে দারোকা ফিরে আসেন এবং সেইখানকার পুরো ঘটনা শ্রীকৃষ্ণ তার পিতা বাসুদেব কে বললেন যদু বংশীয় দের মৃত্যুর কথা শুনে তিনিও পরম দুঃখ পেলেন তখন শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেব কে বললেন বলরাম জী আমার জন্য জঙ্গলে অপেক্ষা করছেন। আমি একবার তার সাথে গিয়ে দেখা করে আসি এই বলে শ্রীকৃষ্ণ সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। বনে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ দেখলেন বলরাম জি এখন সমাধিবিলিন দেখতে দেখতে বলরাম শেষ নাগ অবতার নিয়েছেন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা পেয়েই তিনি বৈকুণ্ঠ ধামে ফিরে গেলেন বলরাম দেহত্যাগ করার ফলে শ্রীকৃষ্ণ আরো দুঃখিত হয়ে বনের মধ্যে দিয়ে চলতে লাগলেন | সে সময় শ্রীকৃষ্ণ একটি স্থানে বসে গান্ধারীর অভিশাপ গুলির বিচার করতে লাগলেন তারও দেহত্যাগ করার ইচ্ছায় তিনি সেখানে বসে চোখ বুঝলেন এবং অমনোযোগ অবস্থায় তিনি মাটির ওপর শুয়ে পড়লেন | সেই সময় জলানী নামক এক সিকারী হরিণ শিকার করতে জঙ্গলে গিয়েছিলেন এবং ভুলবশত শ্রীকৃষ্ণের পায়ে সেই বিষাক্ত বান্টি লেগে যায় এবং ফলে রক্তক্ষয় ও বিষক্ষনের ফলে শ্রীকৃষ্ণের সেখানে মৃত্যু ঘটে |
এরপর শ্রীকৃষ্ণের দেহত্যাগের ঘটনা শ্রীকৃষ্ণের সারথীরা পান্ডবদের গিয়ে জানালেন একথা শুনে পান্ডবরা খুব কষ্ট পেলেন এবং অর্জুন তৎক্ষণাৎ মামা বাসুদেবের সঙ্গে দেখা করবার জন্য দ্বারকায় প্রবেশ করলেন অর্জুন যখন তারকায় প্রবেশ করলেন শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীরা তখন অর্জুন কে দেখে কান্না করতে লাগলেন , অর্জুন ও তখন তার নিজের চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলেন না তারপর অর্জুন বাসুদেবের সঙ্গে দেখা করলেন এবং বাসুদেব তখন তাকে বলল খুব শিগগিরই দারোগা নগরটি সমুদ্রের নিচে বিলীন হয়ে যাবে অতএব তুমি সমস্ত দারকাবাসীকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাও একথা শুনে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজন এবং তার কিছু নগরবাসীদের নিয়ে নিজ হস্তিনাপুরের দিকে বেরিয়ে পড়লেন এবং তাদের সকলের প্রস্থান করার পরেই দারোকা নগরী সমুদ্রের নিচে ডুবে যায় আর এতেই দারোকা নগরীর সমাপ্তি ঘটে |