সুদর্শন চক্র এখন কোথায় রয়েছে জেনেনিন ?
কোথায় গেল সুদর্শন চক্র ভগবান বিষ্ণুর সেই সুদর্শন চক্র এখন কোথায় রয়েছে | মহাভারতের যুদ্ধের পর ভগবান বিষ্ণুর সেই সুদর্শন চক্র কোথায় রয়েছে আজ সেটা কোন গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়নি এখনো পর্যন্ত | ভগবান বিষ্ণুর সেই সুদর্শন চক্র এতটাই শক্তিশালী ছিল যে বর্তমানে পরমাণু বোমা তার ১০% ক্ষমতা অধিকার করে রয়েছে | মহাভারতের যুদ্ধে অশুভ শক্তির দমন ও শান্তির প্রতিষ্ঠাতা করতে ভগবান বিষ্ণু এই চক্রের ব্যবহার করেছিলেন যতবার ভগবান ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ বেধেছে ততবার এই সুদর্শন চক্র ব্যবহার হতে দেখা গিয়েছে | তবে হঠাৎই এই চক্র একদিন উধাও হয়ে যায়, তবে এখন প্রশ্ন একটাই সেই সুদর্শন চক্র এখন কোথায় রয়েছে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চলেছি আর্টিকেলটিতে ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র নিয়ে আলোচনা করব আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আমাদের হিন্দু ধর্মের দেশ লুকানো কিছু ইতিহাস জানতে পারবেন |
সুদর্শন চক্র কি ?
সুদর্শন কথার অর্থ হল ভালো অথবা মঙ্গল দর্শন অর্থাৎ মঙ্গল কারি দর্শন অশুভ শক্তির দমন হোক কিংবা ওষুধদের সাথে যুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভগবান বিষ্ণু এই সুদর্শন চক্র ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে কেবলমাত্র শ্রী বিষ্ণু এবং তার অবতার রায় এই অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারতেন | এই অস্ত্রের নিশানা কোনদিনই ব্যর্থ হতো না যার ওপর সুদর্শন চক্র চালানো হতো তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল | ভগবান বিষ্ণু ও শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছাশক্তি মাধ্যমে চলতো এই সুদর্শন চক্র | যে কাজটি করার জন্য সুদর্শন চক্র কে নিক্ষেপ করা হতো সে কাজটি না সেরে এই অস্ত্রটি থামত না | অস্ত্রটি নিক্ষেপ করার পর সেই শত্রুর পিছন নেবে এবং একই ঝটকায় তার মস্তক শরীর থেকে আলাদা করে দেবে | পুরান স্বাস্থ্য মতে এই অর্থটিকে কোন মতেই চালানো সম্ভব নয় | এই অস্ত্রটি কেবলমাত্র ধর্মের কথাই শুনবে এই অস্ত্রটি কখনোই ভুল কাজ করত না এই কারণেই ভগবান বিষ্ণু খুবই সাবধানে এই অস্ত্রটির ব্যবহার করতেন | ভগবান বিষ্ণুকে মহাভারতের যুদ্ধে শেষবারের মতো এই অর্থটির ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে | তারপর কোথায় গেল এই শক্তিশালী সুদর্শন চক্র তা আমাদের সকলেরই অজানা রয়েছে |
সুদর্শন চক্র দেখতে কেমন ছিল ?
সুদর্শন চক্রের আকৃতি নিয়ে পুরানে আলাদা আলাদা বর্ণিত রয়েছে | পুরাণের মতানুসারে এই চক্রটি হলো একটি গোলাকার চক্র যার ভিতর 108 টি ধারালো ব্লেড রয়েছে এই চক্র কয়েক যোজনযাত্রা অতিক্রম করতে পারতো | এক যোজন সমান ১৩ কিলোমিটার শাস্ত্র মতে সুদর্শন চক্র প্রকৃতপক্ষে কোন অস্ত্রই নয় প্রকৃতপক্ষে এটি ঘুরতে থাকে কিন্তু ভগবান বিষ্ণু চাইলেই এটিকে থামিয়ে দিতে পারে যখনই ভগবান বিষ্ণুকে কোন অশুভ শক্তির বিনাশ করতে হয় তখনই সময়ের পরিবর্তিতে গিয়ে সুদর্শন চক্র নিক্ষেপ করেন | এই চক্রটি চলাকালীন সময় একেবারে থেমে থাকে , বামন পুরাণ অনুযায়ী এই চক্রের কেন্দ্র বৃত্ত দ্বারা তৈরি | বৃত্তে রয়েছে বারতিলিয়া সঙ্গে রয়েছে ছয়টি নাভি |যেখানে 12 তিলিয়া ও বারো মাসকে এবং ছয়টিলিয়ায় ছুটি ঋতুকে প্রকাশিত করছে , সেই কারণেই সুদর্শন চক্রের অস্তিত্ব নিয়ে বিভিন্ন মান্যতা রয়েছে | সুদর্শন চক্র শ্রীবিষ্ণুর তর্জনীতে এবং শ্রীকৃষ্ণর অবতার তার আঙুলে একটি আংটির নেয় ভাসমান থাকে কিন্তু কখনো এই অর্থটি স্থির থাকেনা নিয়ন্ত্রণ এটি ঘুরতেই থাকে | মহাভারতের যুদ্ধকালীন শ্রীকৃষ্ণ সময়কে থামিয়ে অর্জুনকে গীতার উপদেশ দিয়েছিলেন এবং তারপরে পুনরায় তিনি সমস্ত কিছু আগের মতো করে দেন জয়ের দূরত্বের বদ করবার জন্য তিনি এই চকরের ব্যবহার করেছিলেন | আসলে যখন অর্জুন পুত্র অভিমন্যকে বদ করা হয়েছিল তখন অর্জুন শপথ নিয়েছিলেন আগামীকাল সূর্যাস্তের মধ্যেই জয়দ্রু তোকে বধ করবেন না হলে অর্জুন নিজেকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেবেন |
আগামীকাল সূর্যাস্তের পূর্বে কৌরব ছেলেরা কোনমতেই জয়দ্রুতকে রক্ষা করতে সংঘর্ষ চালাতে থাকে এরপরে শ্রীকৃষ্ণ সূর্যাস্তকে কিছুটা থামিয়ে একটি মায়া রচনা করেন তিনি সেই সময় সুদর্শন চক্রকে ব্যবহার করে সূর্যকে সুদর্শন চক্রের পিছনে কিছুটা থামিয়ে রাখেন সন্ধ্যে হয়ে গেছে দেখে কৌরবরা যখন খুব খুশি হলেন এবং আনন্দিত হলে তখনই শ্রীকৃষ্ণ সেই সুদর্শন চক্রটিকে ফিরিয়ে নিলে চারিদিকে আবার রৌদ্র উজ্জ্বল হয়ে যায় এবং সুযোগ বুঝে অর্জুন জয়ের দ্রুতর দিকে নিজের বান নিক্ষেপ করেন এবং তাকে হত্যা করেন | সেই সময় সুদর্শন চক্র ব্যবহার করেই শ্রীকৃষ্ণ গৌরবদের মনে একটা ভ্রম সৃষ্টি করেন আর এভাবেই অর্জুন তার পুত্রের মৃত্যুর বদলা নিয়েছিলেন |
সুদর্শন চক্র কে নিয়ে অনেক মতবাদ রয়েছে কেউ কেউ মনে করে এটি একটি ভৌতিক অস্ত্র যা বিজ্ঞানের তৈরি অস্ত্র থেকে বহু গুণ শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে তৈরি করেছিল আবার কেউ কেউ মনে করে এটি কোন অস্ত্রই নয় শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছায় যখন খুশি এটাকে যে কোন দিকে প্রয়োগ করতে পারতো |
সুদর্শন চক্রের উৎপত্তি
পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী সুদর্শন চক্রের উৎপত্তি নিয়ে আলাদা আলাদা কাহিনী কথিত আছে যেমন যেমন শিব পুরাণ অনুযায়ী বলা হয়েছে এই অস্ত্রটি শ্রী বিষ্ণুর নিজের বানানো অস্ত্র নয়, এটিকে ভগবান শিব নিজে শ্রীবিষ্ণুজি কে ভগবান শিব এই অস্ত্রটিকে আশীর্বাদ স্বরূপ দিয়েছিলেন | আসলে একসময় ভগবান ও অসুরদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছিল প্রতিদিন ভগবানও ওষুধের মধ্যে যুদ্ধ চলতো এবং এক একটি ওষুধ এক একটি ভগবানের ওপর অস্ত্রশস্ত্র প্রয়োগ করত যার ফলে দেবতারা নিরূপণ হয়ে ভগবান বিষ্ণুর কাছে সাহায্যের প্রার্থনা করতেন | তখন বিষ্ণু যখন সেই রাক্ষসের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নিলেন তিনি জানতে পারলেন রাক্ষসের কাছে এক বিশেষ শক্তি রয়েছে তিনি যখনই রাক্ষসদের মেরে ফেলতেন তার কিছুক্ষণ পরে রাক্ষসরা আবার জীবিত হয়ে উঠতেন | তখনই ভগবান শ্রীবিষ্ণু ভগবান শিবের শরণাপন্ন হলেন , সেই সময় ভগবান শিব গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন তখন ভগবান শিব তার সাধনাকে ভঙ্গ না করে তার তপস্যা করা শুরু করেন তিনি মনে করেন কখনো তার ভক্তির আওয়াজ ভগবান শিবের কাছে পৌঁছাবেই এই করে কয়েক বছর পর্যন্ত শিবের সাধনা তিনি করতে থাকেন | তপস্যা চলাকালীন তিনি ভগবান শিব কে এক হাজার কমল ফুল অর্পিত করতেন যা ভগবান শিব কে প্রসন্ন করে এবং ভগবান শিব নিজে শ্রীবিষ্ণুর কাছে প্রকট হন কিন্তু মহাদেব শ্রীবিষ্ণুর একটি পরীক্ষা নিতে যান তাই একদিন যখন শ্রীবিষ্ণু এক হাজার কমল ফুল সংগ্রহ করছিল তখন সেখান থেকে ভগবান শিব একটি ফুল লুকিয়ে রাখেন , ফুল কম দেখে শ্রীকৃষ্ণ ভাবলেন আমারও চোখ তো কমলের মত কিভাবে এখানে একটি ফুল কম হয়ে গেল এরপর তিনি তার একটি চোখ নষ্ট করে ৯৯ টি কমলের সঙ্গে শিবজিকে অর্পিত করলেন | তার এই ভক্তি দেখে মহাদেব অতিপ্রসন্ন হলেন এর কারণেই মহাদেব শ্রীবিষ্ণু জিকে সংসারে সব থেকে শক্তিশালী একটি অস্ত্র ভগবান বিষ্ণু জিকে দিলেন তখন থেকেই এই সুদর্শন চক্র বিষ্ণুর কাছে রয়েছেন |
এটি দুটি অস্ত্রের সঙ্গে তৈরি যা একে অপরের বিপরীত দিকে সর্বদাই ঘুরতে থাকে শিব পুরাণ অনুযায়ী এটিতে ১০৮ নয় ১০ লক্ষ ব্লেড রয়েছে পৌরাণিক কথা অনুসারে এই কথাটি সব থেকে বেশি প্রচলিত | তবে বাল্মিকী রামায়নে প্রচলিত আছে যে ভগবান শ্রীবিষ্ণু চক্রাকান পাহাড়ে হাইতির নামের এক রাক্ষস কে এই চক্রের মাধ্যমে বধ করেছিলেন | শাস্ত্রের মতে আরও বর্ণিত রয়েছে যে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শক্তিকে একত্রিত করে এই অর্থটিকে বানানো হয়েছে যা পরবর্তীকালে ভগবান বিষ্ণুকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে | অনেক বড় বড় পন্ডিতেরা মনে করেন বিষ্ণুজি স্বয়ং এই অস্ত্র টিকে প্রস্তুত করেছিলেন কারণ তিনি নিজেকে চক্রধারি বলে মনে করতেন | শেষবারের জন্য শ্রীবিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণ মহাভারতের যুদ্ধে এই অস্ত্রের প্রয়োগ করেছে তারপর কোনো গ্রন্থে এই অস্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়নি। পুরাণ অনুসারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তার দেহত্যাগ করেছিলেন তখন তার সঙ্গে সঙ্গে এই সুদর্শন চক্র ভূমির নিচে বিলীয়মান হয়ে যান | এরপর থেকে না তাকে কেউ দেখেছে না এর ব্যবহার হতে শোনা গিয়েছে তাই কোথাও এর কোন উল্লেখ করা হয়নি | পুরাণ অনুসারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন আবার কল্কি অবতার রূপে জন্মগ্রহণ করবে তখনই এই অস্ত্র আবার তার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার হতে দেখা যাবে |