কিভাবে শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র গরুর ও সত্যভামার অহংকার ভাঙ্গলেন ?
সুদর্শন চক্র হলো ধার্মিক গ্রন্থ অনুসারে সবথেকে বিনাশকারী একটি অস্ত্র | পুরানে সুদর্শন চক্র ও শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে অনেক ধার্মিক কথার উল্লেখ আছে | শ্রীকৃষ্ণের আগে এই সুদর্শন চক্রটি বিষ্ণু মহাদেবের কাছে ছিল যেহেতু আমরা সকলেই জানি শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অষ্টম অবতার ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর কাছ থেকেই এই সুদর্শন চক্র অস্ত্রটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে পৌঁছেছিল | ভগবত পুরাণের বর্ণিত কথা অনুসারে সুদর্শন চক্র যে কোন বস্তুকে খুঁজতে সক্ষম ছিল এই অস্ত্রটি ইতিহাসের সব থেকে ধ্বংসাত্ম অস্ত্র বলে মনে হয় |
এই অস্ত্র শ্রীকৃষ্ণ শত্রুদের মৃত্যু দর্শন দেওয়ার জন্য শ্রীকৃষ্ণ ব্যবহার করত | তবে কি হয়েছিল যখন এই সুদর্শন চক্র নিজের শক্তির ওপর অহংকার হয়েছিল এই সুদর্শন চক্র একসময় হনুমানজিকে আটকাবার চেষ্টা করেছিলেন এবং এর পরিণাম কি হয়েছিল ? আজকের এই প্রবন্ধে আমরা এটাই জানবো |
ধার্মিক কথা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ তার দ্বারকা নগরীতে রানী সত্যভামার সাথে সিংহাসনে বিরাজমান ছিলেন এবং তাদের নিকটে গরুর ও সুদর্শন চক্র বিরাজমান ছিলেন | এক সময় সত্যভামা ব্যঙ্গ পুন্য স্বরূপ শ্রীকৃষ্ণ কে জিজ্ঞাসা করলেন হে প্রভু আপনি ক্রেতা যুগে শ্রীরাম রুপে অবতারণা হয়েছিলেন সে সময় সীতা আপনার স্ত্রী ছিলেন সে কি আমার থেকেও সুন্দরী ছিল ? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই কথাটির জবাব দিতেই যাচ্ছিলেন, তখন গরুর তাকে প্রশ্ন করলেন ? হে ভগবান দুনিয়াতে এমন কেউ কি আছে? যে আমার থেকেও দ্রুত উড়তে পারে তখন সুদর্শন চক্র নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না | সুদর্শন চক্র তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে জিজ্ঞাসা করলেন হে প্রভু আমি আপনাকে বড় বড় যুদ্ধে বিজয় লাভ করিয়েছি এই সংসারে শক্তিশালী আমার থেকেও কেউ কি আছে ? তখন শ্রীকৃষ্ণ বুঝে গেলেন এই তিনজনের মধ্যে অহংকারের জন্ম নিয়েছে কিন্তু প্রভুর লীলা ছিল অদ্ভুত শ্রীকৃষ্ণ মনে মনে হাসতে লাগলেন , এবং ভাবতে লাগলেন কিভাবে এই তিনজনের অহংকার কে? ধ্বংস করা যায় |
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন গরুরকে বললেন যাও তুমি হনুমানকে ডেকে নিয়ে আসো এবং সেখানে গিয়ে তুমি তাকে বলবে ভগবান রাম মাতা সিতার সাথে তার জন্য অপেক্ষা করছে। তখন গরুর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা পালন করে হনুমানজির কাছে পৌঁছালেন অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণ সত্যভাবামা কে বললেন দেবী তুমি সীতার রূপ ধারণ করে বসে পড়ুন | এবং শ্রীকৃষ্ণ তখন শ্রীরামের রূপ ধারণ করলেন। এবং তখন শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র কে বললেন যাও তুমি মহলের বাইরে গিয়ে মহলকে পাহারা দাও | তুমি সেখানে এমনটাই পাহারা দেবে যাতে আমার অনুমতি ছাড়া কেউ হলে প্রবেশ না করতে পারে তখন সুদর্শন চক্র বলল যথা আজ্ঞা প্রভু আপনি যা বলবেন তাই হবে | এই কথা বলে সুদর্শন চক্র তার মহলের বাইরে পাহারা দিতে লাগলেন |
গরুর পাখির অহংকার হনুমান কিভাবে ভাঙলো ?
অন্যদিকে গরুর শ্রীকৃষ্ণকে বললেন হে বানর মহারাজ আপনাকে শ্রী রামচন্দ্র সীতা দেখা করতে বলেছে আপনি একবার চলুন দেখা করে আসবেন তারা দারোকা নগরীতে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে | তারা আপনাকে আমায় নিয়ে যেতে বলেছে তাই আপনি আমার সঙ্গে চলুন আমি আপনাকে আমার পিঠে বসিয়ে খুব দ্রুতই সেখানে নিয়ে চলে যাব। হনুমানজি তখন গরুর কে বললেন আপনি চলুন আমি সেখানে পৌঁছে যাব গরুর তখন মনে মনে হাসতে লাগলো। আমার থেকেও দ্রুত কি করে যাবে হনুমানজি | এই বলে তখন গরুর রওনা দিলেন দারোগার দিকে যখনই তিনি দারোগায় নামলেন তখন তিনি দেখলেন তার সামনে হনুমানজি বিরাজমান রয়েছে | এই দেখে গরুর তার লজ্জায় মাথা নিচু করে নেন যে এই বিশ্বে তার থেকেও দ্রুত কেউ রয়েছে |
সুদর্শন চক্রের অহংকার হনুমানজি কিভাবে ভাঙলো ?
অন্যদিকে সুদর্শন চক্র হনুমানকে সেই মহলে প্রবেশ করার জন্য বাধা সৃষ্টি করে এবং যার ফলে হনুমানজি সুদর্শন চক্রকেই গিলে খেয়ে নাই | এরপর যখন সুদর্শন চক্র হনুমানজির পেটে আটকে থাকে হনুমানজি আস্তে আস্তে মহলের ভেতরে প্রবেশ করে এবং রামচন্দ্র ভেসে থাকা শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করে তখন রামচন্দ্র হনুমানকে জিজ্ঞাসা করে অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ হনুমানকে জিজ্ঞাসা করে হে পবন পুত্র তুমি কিভাবে এই মহলের ভেতর চলে তোমাকে কেউ কি বাধা সৃষ্টি করেনি তখন হনুমানজি তার মুখ খুলে এবং সুদর্শন চক্র তার মুখের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে তখন শ্রীকৃষ্ণ বুঝতে পারে যে সুদর্শন চক্র তার কর্তব্য সঠিক পালন করেছে বটেই তবে হনুমানজির থেকে শক্তিশালী কেউই হতে পারে না। সুদর্শন চক্র তখন হনুমানের সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হল যে এই সংসারে তাদের থেকেও শক্তিশালী কেউ বিরাজমান করছে তবুও কোন অহংকার ছাড়াও নিজেকে কর্তব্য পরায়ন ও দায়িত্বশীল করে চলেছে।
সত্যভামার রূপের অহংকার শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে ভাঙলো ?
হনুমানজি তখন শ্রী রামচন্দ্র কে বললেন প্রভু আপনার সাথে দেখা করায় আমাকে কেউ কি কখনো আটকাতে পারবে এই চক্র আমাকে বাধা দিচ্ছিল তাই এই চক্রকেই আমি আমার মুখের ভেতরে রেখে আমি আপনার সাথে দেখা করতে চলে এলাম আমায় ক্ষমা করে দেবেন প্রভু তখন শ্রী রামচন্দ্র মনে মনে হাসতে লাগলেন | আর তখন এই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সত্যভামাকে দেখে হনুমান জি বললেন হে প্রভু আমি তো আপনাকে চিনি। আপনি তো সে রামচন্দ্র যিনি কৃষ্ণ রূপে এখানে রয়েছেন তবে এই মহিলাকে যিনি মাতা সীতার রুপভেশ ধারণ করে এখানে আপনার পাশে রয়েছেন | একথা সোনা মাত্রই লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেল সত্যভামার এবং তখনই তার রূপের অহংকার ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে গেল |
এই ভাবেই মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণ রানী সত্যভামা, গরুর ও সুদর্শন চক্র অহংকার ভাঙ্গলেন আশা করি এই আর্টিকেলে থাকা বিষয়বস্তু আপনাদেরকে অবশ্যই একটা নতুন কিছু জানবার শক্তি লাভ করবে আপনি যদি একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই কিন্তু আমাদের এই ওয়েবসাইটে থাকার সমস্ত আর্টিকেলগুলি প্রতিদিন যত্ন সহকারে পড়বেন আমরা হিন্দু ধর্মের ওপর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিদিন সুন্দর সুন্দর ধর্মের ওপর রীতিকথা নিয়ে আলোচনা করব আপনারা অবশ্যই এগুলি পড়বেন এবং আপনাদের বাড়িতে থাকা ছোট এবং বড়দের এই শ্লোক গুলি শোনাবেন যদি আপনারা ধার্মিক হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে যাবেন।