রাবণ সীতাকে কিভাবে হরণ করেছিলো?
যখন রাম লক্ষণ এবং সীতা বনবাস কাটাচ্ছিলেন তখন বোনের মধ্যে একদিন মারিস সোনার হরিণ সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সেই সময় সীতা সেই হরিণটিকে দেখতে পেয়েছিল এবং সোনার হরিণটি নেওয়ার জন্য রামকে বলেছিলেন এনে দেবার জন্য। তখন রামসে সোনার হরিণটি ধরার জন্য বোনের মধ্যে চলে যায়। এবং লক্ষণকে বলে যাই সীতাকে পাহারা দেবার জন্য। যতক্ষণ আমি ফেরেনা আসি ততক্ষণ যেন লক্ষণ তুমি সীতা মাকে পাহারা দিও।এই কথা বলে লক্ষণ কুটির থেকে বেরিয়ে গেল সোনার হরিণকে ধরে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু রামচন্দ্র ততক্ষণে বুঝতে পেরে যায় যে ওটা সোনার হরিণ নয়, আসলে সে মারিজ রাক্ষস। রাম মারিস কে বদ করে দেয়। কিন্তু রাবণ কি পারবে সীতা মাকে হরণ করতে।( রাবণ সীতাকে কিভাবে হরণ করেছিলো?)
রাম সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে কি হয়েছিল?( রাবণ সীতাকে কিভাবে হরণ করেছিলো?)
লক্ষণ বলছেন সেটা মা আপনি দয়া করে স্থির হয়ে বসুন, তখন সীতা বলল যে লক্ষণ তোমার দাদা বিপদে পড়ে তোমাকে আকুল ভাবে প্রার্থনা করে ডাকছে তুমি শিগগিরি যাও তোমার দাদাকে বাঁচাও। ভাই দয়া করে তুমি ওনাকে সাহায্য করতে চলে যাও। তখন যখন বলছেন আমি আমার দাদাকে ছোটবেলা থেকে যিনি আমার দ্বারা কখনো বিপদে পড়তে পারেন না দয়া করে আপনি শান্ত হন সীতামা। তো আমি কি বিশ্বাস করব যে তোমার দাদার কখনো কোনো বিপদ হতে পারে না এই তো। যদি আমার দাদার কখনো সত্যি সত্যি বিপদে পড়ে থাকে তো আমার দাদা কখনো এভাবে কেঁদে কেঁদে আমাকে ডাকবে না। রামচন্দ্র একজন বীর আপনি জানেন না সেটা। তুমি জানো না লক্ষণ যে বোনের মধ্যে রাক্ষসে ভরা। আপনি ভুল করছেন সেটা আমার বোনের মধ্যে আর কোন রাক্ষস নেই। শুধুমাত্র ওই মারিস ছাড়া সীতা মা আপনি দয়া করে বিশ্বাস করুন এটা মারিজের গলা অন্য আর কোন রাক্ষসের নয়। লক্ষণ কেন তুমি তোমার দাদাকে সাহায্য করতে চাইছ না। ফিতামান মারিজ এমন একজন বড় রাক্ষস যে যখন তখন যে কোন রকমের আওয়াজ নিজে করে তৈরি করতে পারে। তাছাড়াও নানারকম চেহারা সাধারণ করতে পারে ও রাবণের ভাই এটা কি আপনি জানেন না। রাক্ষসদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মায়াবী রাক্ষস ওই মারিজ। আমি নিশ্চিত সীতামা যে এটা মারিজের গলা। তারমানে তুমি তোমার দাদার কাছে যাবে না তাইতো। দাদা বিপদ হলে আমি সবার আগে ছুটে দাদার কাছে পৌঁছে যাব। দাদার জন্য আমি আমার প্রাণ ও শেষ করে দিতে পারি। মিথ্যে কথা বলছো তুমি তখন। তুমি আজ পর্যন্ত যা যা কথা বলেছ লক্ষণ তার সব মিথ্যে বলেছ আমাকে। না সেটা মা আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি যা বলেছি সব সত্যি বলেছি। কে আপনি কি বলছেন সেটা মাঝে আপনি আমার আসল চেহারা বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন। হ্যাঁ লক্ষন আমি ঠিকই বলছি। যে হরিণ দেখেছি তামা আপনি সুরান হরিণ নেব বলেছিলেন সেই হরিণ আসলে সোনার হরিণ নয় ওটা আসলে মারিস ছিল। সেটাকেই নেওয়ার জন্য আপনি আমার দাদার কে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর তাছাড়াও সীতা মা এই গলাটা দাদার নয়। আজ আমার আর তোমার দাদার এই দুর্দি নিয়ে লক্ষণ তুমি আমাদের সঙ্গ দিচ্ছ না। আর একটা কথা বলবেন না সীতামা আমি আর এসব কথা শুনতে পারছি না। সত্যি কথা বললে সবারই খারাপ লাগে ভাই লক্ষণ।এটা সত্যি না সীতা মা। তুমি যা যা বলছেন সব ভুল সীতামা। তাহলে তুমি কেন তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছ না। তুমি কেন এরকম করছ লক্ষণ। দাদা আপনার সামনে আমাকে বলে গেছে যেন আপনি আপনাকে একা কুটিরে রেখে কোথাও না যায়। এবার বলুন যে আমি এটাও মিথ্যে বলছি। তাছাড়া তুমিই তো বলছ এই বোন নাকি রাক্ষস বিহিন তাহলে আমাকে একা রেখে যেতে তোমার ভয় কোথায়। আজ পর্যন্ত আমি একদিনও দাদার কথার অবাধ্য হয়নি। দাদা আমাকে আপনার পাহারায় রেখে গেছে। আমি দাদার কথার অবাধ্য হতে পারব না।আমি এখান থেকে কোথাও যেতে পারবো না। আমি যদি মারা যাই তাও আমি অন্য কোথাও যেতে পারবো না। তাই নাকি লক্ষণ আমি মারা গেলেও তুমি যেতে পারবে না। আপনি কি বলছেন সেটা আজ আমার দাদার বিপদ। আমার মাথার ঠিক নেই ভাই যখন আমি কি বলছি কি করছে কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। আমি কিছু জানিনা লক্ষণ আমি শুধু এটুকু জানি যে আমার স্বামী সোনার হরিণ আনতে গিয়ে বিপদে পড়েছে। এই বোনের সমস্ত রাক্ষস তাকে ঘিরে ধরেছে। এবং সে এরকম বিপদে পড়ার পরেও তার সবচেয়ে প্রিয় ভাই জানতে পেরেছে যে তার দাদা বিপদে পড়েছে তা সত্ত্বেও সে তার দাদাকে বাচানোর জন্য যাচ্ছেনা। ঠিক আছে সেটা আমি যাচ্ছি দাদার খোঁজ করতে।( রাবণ সীতাকে কিভাবে হরণ করেছিলো?)
লক্ষণ বোনের ভেতরে গেল দাদার খোঁজ করতে সীতা মাকে একা রেখে কুটিরে 🙁 রাবণ সীতাকে কিভাবে হরণ করেছিলো?)
ঠিক আছে সীতামা আমি চলে যাচ্ছি। আপনার শান্তির জন্য আমাকে যেতেই হবে দাদার খোঁজ করতে। তবে তুমি যাচ্ছি বলে যাচ্ছো না কেন লক্ষণ। ঠিক আছে সীতা, আমি আবার এই তীর দিয়ে এই উঠনের চারদিকে গোল করে লক্ষণ রেখা বা গন্ডি কেটে দিচ্ছি। আপনি এবার আমাকে কথা দিন যে আজ যত বিপদে আসুক না কেন, যত লোভই হোক না কেন আপনি কখনোই কোন কিছুর জন্য কোন কিছুর বিনিময় এই গণ্ডির বাইরে বেরোবেন না। তখন সেটা মা বলল কেন জানতে পারি লক্ষণ ভাই। অবশ্যই জানতে পারবেন এই গণ্ডির ভেতরে আপনি যতক্ষণ থাকবেন ততক্ষণ আপনি নিরাপদ থাকবেন কোন বিপদ কোন কিছু আপনাকে ছুঁতে পারবে না। তাড়াতাড়ি কথা দিন সীতামা আমাকে যেতে হবে দাদার রক্ষার জন্য। তখন সেটা না বললে বেশ ঠিক আছে তুমি যাও ভাই লক্ষণ। তারপর লক্ষণ দাদার খোঁজার জন্য বোনের ভেতরে চলে গেল।( রাবণ সীতাকে কিভাবে হরণ করেছিলো?)
সীতা মায়ের কুটিরে রাবণের প্রবেশ 🙁 রাবণ সীতাকে কিভাবে হরণ করেছিলো?)
লক্ষণ দাদাকে খোঁজার জন্য বনে চলে যাবার পর এক গরীব ভিখারী ব্রাহ্মণের বেশ ধরে রাবণ সীতার কুটিরে এসে হাজির হলো আর সেটা আমাকে ডাকতে লাগল কে আছো কুঠিরে বেরিয়ে এসো বাইরে। তখন সেটা কে,কে এসেছে বাইরে বলে বাইরে বেরিয়ে আসলো । তখন তখন সেই ভিখারি পড়লে আমি হতদরিদ্র এক গরীব ব্রাহ্মণ আমি বহুদিন ধরে কিছু খেতে পাই না আজকেও সারাদিন না খেয়ে আছি খুব দুর্বল লাগছে আমার যদি কিছু খাবার থাকে তো আমায় ভিক্ষা দিন আমি খেয়ে আমার ক্ষুধা নিবারণ করতে চাই। তারপর সেই গরিব ভিখারী ব্রাহ্মণ বলতে লাগলো যে কি সুন্দর তোমার গলার স্বর্গ কি সুন্দর তোমায় দেখতে তুমি কোথাকার মেয়ে, কারী বা বউ এই ঘন জঙ্গলে কেনই বা কুটির বেঁধে আছো। তুমি কি জানো না এই জঙ্গলে বহু জীবজন্তু রাক্ষসের বাস। আর তুমি এতই গয়না গাটি পড়ে আছো তুমি কি কোন দেবদেবী। তখন সেটা মা হেসে উত্তর দিল না না ভয় পাওয়ার কিছুই নেই আমি সাধারণ একজন মানুষ। আপন মনে মনে বলতে লাগলো যে সীতাকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি এত সুন্দর একজন মেয়ে এই বন জঙ্গলে কেন থাকবে ওর স্থান সোনার পালঙ্কে। আমি ওকে খুব যত্ন করে নিয়ে গিয়ে রাখবো। তখন রাবণ সেই গরিব বামুনের বেশ ধরে যাওয়ার পরে আবার সে আমাকে জিজ্ঞেস করল তুমি কে সেটা তো বললে না মা। তখন সীতামা উত্তর দিল তবে বেশ্যনতা পড়শী আমি হলাম জনক রাজার কন্যা সীতা। মিথিলার রাজা জনক একদিন জমে চাষ করতে গিয়ে মাঠে লাঙ্গল দিয়ে চাষ করার সময় আমি কোন মাটি থেকে উঠে লাঙলের মাথায় বেঁধে গেছিলাম। আমার পিতা আমাকে কোলে তুলে নেন ও নিজের মেয়ের মতন আমাকে মানুষ করেন। ও ভালোবাসা আমার নাম দেন জানকি। আচ্ছা মা তুমি তো বললে না তুমি কার ঘরনি। ও আমি হলাম রামচন্দ্রের ঘরণী অযোধ্যার রাজা দশরথ এর বড় ছেলে রামচন্দ্র আমি তার স্ত্রী। ওমা! ওই রামচন্দ্র তোমার স্বামী। হ্যাঁগো তা পড়ছি উনি আমার স্বামী। বাজে অন্য কেউ আমায় বিয়ে করে নিয়ে চলে যায় সেজন্য আমার পিতা জনক একটা উপায় বের করেছিলেন। সেটা আবার কি? মারপিটা ঠিক করেছিল শিবের যে হরধনু আছে সেটা এনে নিজের এখানে রাখল তারপরে এটাকে ভাবল যে যে এটাকে তুলতে পারবে তার সাথে আমি আমার মেয়ের বিবাহ দেব। কিন্তু বহু লোকজন আসলে কিন্তু কেউ তুলতে পারল না তারপরে বিশ্বামিত্র মনে একজনকে নিয়ে আসলো তার নাম হলো রামচন্দ্র। তখন ভিসা মাত্র উনি আদেশ দিল যে রাম তুমি তোমার এই হরধনু টি তুলে দেখাও ওদেরকে। তখন রামচন্দ্র গুরু বিশ্ব মিত্রের আদেশে সেই হরধনু টি তুলে দেখালেন এবং তারপরেই জনক তার কন্যার সাথে রামচন্দ্রের বিবাহ দিলেন। এই কথা শুনে রাবণ বোঝেনা সেজন্যই বলছি তোমাকে দেখতে দেবীর মতন। রাজার কন্যা তুমি আর রাজার বউ তুমি তাহলে দেখতে তো সুন্দর হবে। তখন সেটা মা বললেন তুই যেটা বলছি তুমি বলো তুমি এখানে অপেক্ষা কর আমি তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি। তারপর রাবন সেদিন আমাকে জিজ্ঞেস করল তুমি এই বোনের জঙ্গলে গভীর জঙ্গলের ভিতরে কুটির বানিয়ে রয়েছে তোমাদের ভয় করেনা। না তো পড়ছে আমাদের ভয় করবে কেন আমার এক পাশে আমার স্বামী রামচন্দ্র এবং অন্য পাশে তার ছোট ভাই লক্ষণ থাকেন। তাহলে আমার আর ভয় কিসের তখন রাবণ জিজ্ঞাসা করলেন তোমাকে কি ওরা বলে নি যে এখানে অনেক প্রচুর খারাপ জীবজন্তু ও রাক্ষসের বাস। বলে হ্যাঁ তপস্বী কিন্তু তুমি কি জানো না তাপসী যে সমস্ত রাক্ষস আমার স্বামীর রামচন্দ্র ও তার ছোট ভাই লক্ষণ মেরে ফেলেছে। ও তাহলে তো খুব ভালো কথা। মুরশিদা যখন খায় তার জন্য খাবার নিয়ে আসছিলেন এবং বলছিলেন জেতা পশ্চিম তোমার পরিচয়টা আমি কিছু পেলাম না তখন রাবন বলেন আমি কুবেরের ভাই আমি ভিক্ষা করি আমি আমার জীবন ধারণ করি। তখন সীতা মা জিজ্ঞেস করেছে তুমি আরেকটু কিছুক্ষণ বসে থাকো তাপসী আমার স্বামীর রামচন্দ্র ফিরে আসুক যে সেবা করতে খুব ভালবাসেন। তখন তাপসী বললেন যে আমার এখনো পর্যন্ত স্নান হয়নি বেলা বয়ে যাচ্ছে এখন যা দেবার একটু দিয়ে দিন আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে স্নান সেরে কিছু খাব না হলে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। তাহলে আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর আমি দেখে আসি ঘরে আর কোন ফল আছে নাকি তাহলে আরো কিছু ফল আমি তোমায় দিয়ে দেবো তপস্বী। এদিকে রামচন্দ্র খুব জোরে জোরে পেরে বাড়ি ফিরছিলেন ঠিক বাড়ি ফেরার পথে লক্ষণ এর সাথে দেখা হলো রামের এবং রামচন্দ্র জিজ্ঞেস করলে তুমি এখানে কেন? তুমি তো আমাকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলে, তাই আমি তোমাকে বাঁচাতে এসেছি। আমি তোমাকে ডাকিনি লক্ষণ ওটা মরিচের গলা। আর ওই সোনার হরিণটি ও মারিজ সেজেছিল। তখন রামচন্দ্র তাড়াতাড়ি লক্ষণকে বলুন লক্ষণ তাড়াতাড়ি কোন বিপদ হচ্ছে। আপনি তাড়াতাড়ি আমাকে যাই দেবেন দিয়ে দিন নিশিতা মা আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি যাব আমার খিদে পেয়েছে। তারপরে সীতা মা তাড়াতাড়ি সেই খাবারটিকে নিয়ে এসে রাবণের সামনে ধরল আর রাবণ বল আর একটু সামনে এসে খাবারটি দিয়ে যান আমি আর এগোতে পারছি না। তারপর লক্ষণ যে গণ্ডি কেটে দিয়েছিল সীতাকে সীতা নিজে সেই গণ্ডি পার হয়ে গিয়ে রাবণকে খাবার দিচ্ছিল। সীতা নিজের গণ্ডি পার হওয়ার পরেই রাবণ সেই তপস্বী রূপ ছেড়ে নিজের রূপে চলে আসলো। এবং সীতার হাত ধরে সীতাকে নিয়ে রথে করে চলে গেল।( রাবণ সীতাকে কিভাবে হরণ করেছিলো?)