মহাভারতে ইরাবণ কতটা শক্তিশালী ছিল ?
যখন অর্জুন ১২ বছর বনবাস থাকার সময় একদিন গঙ্গা নদীতে স্নান করবার জন্য নেমেছিল সেই সময় নাগ কন্যা অনুতি অর্জুনের ওপর আসক্ত হয়ে তার পা ধরে জলের ভিতর টেনে নিয়ে যায় কোনোটি ঐরাবত নামক নাগকুলের নাগরাজ কৌরভের কন্যা ছিলেন | তখন তিনি অর্জুনকে পাতাল লোকে নিয়ে গেলেন এবং অর্জুনকে বিবাহ করবার জন্য অনুরোধ করলেন | এইভাবে অর্জুন অনুতির সাহায্যে তার গর্ভে থেকে এক মহান শক্তিশালী ইরাবণ নামক পুত্রের প্রাপ্ত করেছিলেন |
মহাভারতের ভিশ্ব পর্বের ৯০ অধ্যায় অনুযায়ী ইরাবন নাগলকে তার মাথার দ্বারা লালিত পালিত হয়ে বড় হয়ে উঠেছিলেন, আর সব রকম ভাবে সেখানেই তাকে রক্ষা করা হয়েছে | ইরাবন প্রচুর রূপবান গুণবান শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন তিনি নিজের মাতা দ্বারা রাখল কেই বড় হয়ে উঠেছিলেন এবং নাগলকেই তিনি অস্ত্রশস্ত্র বিদ্যার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করেন | ইরাবন মায়ের দ্বারা যুদ্ধ করাতে অত্যন্ত নিরাপন ছিলেন, তিনি একজন কুশল ধনুন্দর ও মায়াবীর অস্ত্র যোদ্ধা ছিলেন | এরপর ইরাবন যখন বড় হয় তখন তিনি জানতে পারেন তার পিতা অর্জুন অযোধ্যা কুলে গেছেন তখন তিনিও সেখানে গিয়ে পৌঁছালেন এবং সেখানে গিয়ে সেই মহান পরাক্রমশালী যোদ্ধা তার পিতামহ কে দেখে নম্রভাবে তার পায়ে প্রণাম করলেন আর অর্জুনকে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বললেন- হে প্রভু আমি আপনারই পুত্র ইরাবন তিনি তখন তার পুত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরে সহিং তার সঙ্গে ইন্দ্রের ভবনের দিকে নিয়ে গেলেন | সেই সময় অর্জুন তার পুত্রকে ভালোবেসে তার সমস্ত কার্য বিবরণ দিয়ে বললেন “হে পুত্র তুমি যুদ্ধের সময় অবশ্যই আমাকে সহায়তা করবে” তখন ইরাবন ঠিক আছে বলে সেখান থেকে চলে গেলেন |
ইরাবণ মহারথী শ্রেণীর যোদ্ধা ছিলেন কুরুক্ষেত্রে ইরাবণ পাণ্ডবদের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করেছিলেন | ইরাবনকে নিয়ে দক্ষিণ ভারতে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে এমনকি তামিলনাড়ুতে তার একটি মন্দিরও আছে যেখানেই তাকে পূজা করা হয়ে থাকে | পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে একবার শ্রীকৃষ্ণ এক মহিলা বেশ ধারণ করে, নাগলকে গিয়েছিল এবং নাগরাজা ইরাবনকে বিয়ে করেছিলেন এছাড়া বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গাতে ইরাবনকে কিন্নর সমাজের দেবতার রূপে পূজা করা হয় |
মহাভারতের ভিশ্ব পর্বের অধ্যায় ৪৫ অনুসারে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রথম দিনেই বিপক্ষ শ্রোতাজোটের রথের পিছনে ধাওয়া করে অর্জুনের সেই বীর পুত্র এবং শোতাজুত মেরে সেখানে সেখানে হুংকার করতে থাকে এবং তার সমস্ত সেনাকে তার বাণীর দ্বারা আচ্ছারিত করে নেয় | কিন্তু সেই সময় অনেক যোদ্ধা একসঙ্গে যুদ্ধ করছিল বলে, শ্রোতাজুত ও ইরাবনের যুদ্ধে কোন পরিনাম বেরোয়না এরপরে পরম শক্তিশালী যোদ্ধা বিন্দু আর অরবিন্দের সঙ্গে এই বীর ইরাবনের যুদ্ধ হয়েছিল এই তিনজন মহারথীর যুদ্ধ ছিল প্রচন্ড রোমাঞ্চকরী | নিরাপদ তার চারটি বাণীর দ্বারা অরবিন্দের চারটি ঘোড়াকে যম লোকে পৌঁছে দিয়েছিল, এরপর ভয়ে অনভিন্দ তার রক্ত ত্যাগ করে বিন্দের রথে গিয়ে বসে মহাভারতের যুদ্ধে তারা দুজনেই একই রথের উপর বসে, ইরাবনের দিকে লক্ষ্য করে তীরের বর্ষা শুরু করেন ইরাবন ও তাদের দিকে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিক্রিয়া করতে থাকেন এর ফলে প্রথমে বিন্দু ও অরবিন্দের রথের সারথি মারা যায় পরবর্তী সময়ে বিন্দু ও অরবিন্দ ইরাবনের কাছে রণক্ষেত্রে মারা যায় যার পরবর্তী সময়েই এরাবন কৌরব সেনাদের ওপর ভয়ংকর তান্ডব ডেকে নিয়ে আসে সেই ভয়ংকর বিপত্তি দেখে শকুনীর ৬ ভাই সেনানিএ আসেন এবং ইরাবনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন সেই ছয় ভাইয়ের বাণী আহত হয়ে ইরাবণ রক্তক্ষরণ অবস্থায় সেই কুরুক্ষেত্রের মাটিতেই মারা যায় | সেই সময় এরকম ছিলেন একা আর প্রহলকারীদের সংখ্যা ছিল প্রচুর |
আজকে তোমাদের মহাভারত যুদ্ধে উপস্থিত এক পরখ্রমী যোদ্ধা কি ইরাবণের সম্পর্কে আলোচনা করলাম। যে সমস্ত যোদ্ধাদের সম্পর্কে হয়তো আপনারা এখনো অজ্ঞাত রয়েছেন সেই সমস্ত যোদ্ধা ও মহাভারত রামায়ণের বেশ কিছু পর্ব আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যাতে সনাতন ধর্ম যে প্রকৃতি ন্যায় অন্যায় সবকিছু আপনারা বুঝতে পারেন আপনারা একজন প্রকৃতির ধার্মিক ব্যক্তি হয়ে জীবন যাপন করতে পারবেন সনাতন ধর্মের মত শ্রেষ্ঠ ধর্ম বিশ্বে আর কোন ধর্ম নাই।