আসলে স্বর্গ কাদের জন্য, পাপী ব্যক্তিদের জন্য না পূর্ণমান ব্যক্তিদের জন্য ?
আমাদের সকলের মনের মধ্যে
একটাই প্রশ্ন জেগে থাকে স্বর্গলোক কাজের জন্য তৈরি হয়। যারা কি বেশি দানি হয়
নাকি যারা এ জন্মে অনেক ভালো কর্ম করে থাকে কিংবা যারা দিনরাত ভগবানের নাম জপ করতে
থাকে ও পূজা রচনা করেন কিন্তু বন্ধুরা এমন কখনোই হয় না এই সমস্ত মানুষেরা কখনোই
স্বর্গে যেতে পারেনা। তবে আপনারা ভাবতেই পারেন এই সমস্ত মানুষেরা যদি স্বর্গে না
গিয়ে থাকে তবে কারা আসলে স্বর্গে যায় কেমন কর্ম করলে স্বর্গে যাওয়া যেতে পারে
এটাই আজকে একটা গল্পের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি। অবশ্যই আর্টিকেলটি
সম্পূর্ণ পড়ুন আপনারা বুঝতে পারবেন স্বর্গে যাওয়ার জন্য কোন কোন কাজগুলি করতে
হবে এবং কোন কোন কাজগুলি করবেন না।
অনেক এক সময়ের কথা যখন
একসাথে চার ব্যক্তির মৃত্যু হয় মৃত্যুর পর ওই চার ব্যক্তি স্বর্গের দরজার সামনে
এসে দাঁড়িয়ে থাকেন যাদের মধ্যে একজন ছিল রাজা এবং একজন ছিলেন পূজারী আর একজন
ছিলেন ব্যবসায়ী ও আর একজন হলেন দিনমজুর এদের মধ্যে কেউই জানতেন না কে স্বর্গে
যাবে বাকে নরকে যাবে এরা সকলেই স্বর্গের দরজা খোলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং
সকলেই একে অপরের সঙ্গে কথা বলছিলেন প্রথমে রাজা বললেন আমি একজন ভালো রাজা ছিলাম
আমি পৃথিবী লোকে অনেক নাম অর্জন করেছি এজন্য আমার স্বর্গের যাওয়ার সম্ভাবনাটা
অনেক বেশি, এরপর ব্যবসায়ী বললেন আমি পৃথিবীতে থাকতে অনেক অর্থ উপার্জন করেছি এবং
সেই অর্থ দিয়ে আমি হাজার হাজার মানুষকে সহায়তা করেছি এইজন্যে স্বর্গে তো আমি
যাব। এরপর পূজারী বললেন তোমরা যাই বলো স্বর্গের দরজা তো আমার জন্যই খোলা থাকবে
কেননা আমি দিনরাত ভগবান নিয়ে পূজা আলোচনা করেছি। সেই সময় সেখানে উপস্থিত সমস্ত
ব্যক্তিগণ ভাবলেন যে হ্যাঁ এটা তো সত্য স্বর্গে যে পূজারী যাবে তখন তারা সকলে যখন
নিজেদের মধ্যে কথোপকথন করেন তখন সকলের নজর ওই দিনমজুরের ওপরেই পড়ে। তখন কিন্তু ওই
দিনমজুর চুপচাপ কোন কথা না বলে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলেন মাথা নিচু করে।
এরপর স্বর্গের দরজা খুলে
গেল আর স্বর্গের দেওয়া যায় দেবদূত এসে দাঁড়ালেন দেবদূতের হাতে একটি পুস্তক ছিল
এই পুস্তকে সকলের কর্মের ব্যাপারে লেখা ছিল তখন দেবদূত সবার প্রথমে রাজা কে ডাকলেন
এবং জিজ্ঞাসা করলেন বল তুমি তোমার জীবনে কি কি ভালো কর্ম করেছো, আমি এই পুস্তক
দেখে তার বিচার করব তুমি কি স্বর্গে যেতে পারবে নাকি পারবে না। তখন রাজা বললেন
আমার রাজ্য যতটাই বড় ছিল ততটাই সমৃদ্ধি শালী ছিল আর আমার রাজ্যের সব মানুষই সুখী
ছিল আর আমি কখনোই তাদেরকে কোন জিনিসের অভাব হতে দেয়নি এটাই হলো আমার ভালো কর্ম।
তখন দেবদূত তার হাতে থাকা পুস্তকের দিকে তাকালো এবং দেখল যে তিনি সত্যিই তার
রাজ্যকে সুখী এবং সমৃদ্ধশালী রেখেছে । তখন দেবদূত রাজা কে বলল এটা তুমি সত্য বলেছ
বালক কিন্তু তুমি তোমার রাজ্যের সীমানা বাড়ানোর জন্য অনেক মানুষের সাথে যুদ্ধ করে
তাদের প্রাণ নিয়েছো সেই হাজার হাজার সৈনিকদের পরিবারের দুঃখের কারণ তুমি হয়েছো
এইজন্য তুমি স্বর্গে যেতে পারবেনা।
এবার দেবদূত ডাকলেন
ব্যবসায়ীকে, ব্যবসায়ীকে ডেকে দেবদূত বললেন তোমার ভালো কর্ম কি কি আছে আমায় বল
তখন ব্যবসায়ী বললেন আমি শত শত মানুষকে ভোজন করিয়েছি অনেক আশ্রমে দান করেছি অনেক
অসহায় গরিব মানুষকে ঘড় দিয়েছি এই সমস্ত কিছু আমার ভালো কর্ম তখন দেবদূত
পুস্তকটি কে দেখলেন আর বললেন হ্যাঁ তোমার কথা তো ঠিক আছে তুমি তোমার জীবনে অনেকই
দান ধর্ম করেছ। কিন্তু যে টাকায় তুমি দান ধর্ম করেছ কিন্তু সেই টাকা উপার্জন করতে
তুমি অনেক মানুষকে ঠকিয়েছো অনেক মানুষকে মিথ্যে কথা বলেছো তাই তুমিও স্বর্গে যেতে
পারবেনা।
এরপর দেবদূত পূজারীকে
ডাকলেন ডেকে তাকে জিজ্ঞেসা করা হলো যে আপনি জীবনে কি কি ভালো কর্ম করেছেন সেগুলি
আমাকে বলেন তখন পূজারী খুবই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জমদূতকে বললেন যমদুত মশাই আমি
অসংখ্য মানুষকে জ্ঞান দিয়েছি হাজারযোগ্য ও পূজা অর্চনা করেছিলেন আর দিবারাত্রি
শুধুমাত্র ভগবানকেই স্মরণ করেছি তখন দেবদূত আবার পুস্তকটি দেখলেন দেখে পূজারীকে
বললেন পূজারী তুমি যখনি কাউকে জ্ঞান দিয়েছো সেই জ্ঞানের কথাটিতে তুমি কখনো নিজে
গুরুত্ব দাউনি তুমি যখনই ভগবানের নাম ও পূজা অর্চনা করেছো সেটা শুধুমাত্র ভগবানের
ভক্তির ওপর নয় তুমি সর্বদা নিজের স্বার্থের জন্য ভগবানের নাম নিয়েছো এবং জ্ঞান
দিয়েছো তাই তুমিও কখনোই স্বর্গে যেতে পারবে না। এই সমস্ত কিছু নিজের চোখের সামনে
হতে দেখে দিনমজুর আশ্চর্য হয়ে রইলেন এবং ভাবলেন তিনি এতক্ষণ যাদেরকে মহান ভেবে
আসছিলেন তাদের ব্যাখ্যা স্বর্গের দুয়ারে এসে ব্যর্থ হয়ে গেলেন। পৃথিবীতে যাদেরকে
ভালো মারা গিয়েছে স্বর্গের দুয়ারে এসে তাদের কোন অর্থ নেই।
এবার এলো দিনমজুরের পালা
যমদূত এসে দিনমজুর কে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি এবার তোমার জীবনের ভালো কর্মগুলির কথা
আমায় বলো তখন দিনমজুর তাকে বললেন হে প্রভু আমি জানি আমি স্বর্গে যাবার যোগ্য নয়
তবুও শুধুমাত্র একবার বাইরে থেকেই স্বর্গের দর্শন করতে চাই। ব্যাস এর থেকে বেশি
আমার আর কোনরকম কোন ইচ্ছে নেই এর কারণ স্বর্গে যাওয়ার জন্য যে কর্ম করতে হয় আমি
তেমন কোন কর্মই করিনি পৃথিবী লোকে আমি শুধুমাত্র দিনরাত পরিশ্রমী করেছি আর সেই
কর্ম করে যেটুকু পয়সা আমি উপার্জন করেছি তা দিয়ে আমার পরিবারের মুখে খাবার তুলে
দিতাম তাই দামধর্ম করার মতো আমার কাছে কোন অর্থ ছিল না আর আমি সেটা করতেও পারিনি।
আর কারণ কাজকর্ম করার পর আমি যেটুকু সময় পেতাম সেই সময়টুকু আমার বৃদ্ধ মা বাবার
সেবা করতাম আর সময় পেলে কখনো কখনো মন দিয়ে যেতাম আর ভগবান আমাকে যেভাবেই রেখেছে,
তার জন্য আমি ভগবানকে ধন্যবাদ জানাতাম। দিনমজুরের এই সব কথা শুনে জমদূত অনেক সময়
ধরে পুস্তকটিকে দেখলেন এরপর দিনমজুর কে বললেন তুমি ভালো করে ভেবে দেখো হয়তো তুমি
কখনো কোনো ভালো কর্ম করেছ তুমি একটু ভেবে দেখো দিনমজুর তখন খানিকক্ষণ ভাবার পর
বললেন হ্যাঁ প্রভু আমার মনে পড়েছে আমি একসময় খুবই ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং আমার কাছে
খাবার এসেছিল তখন আমি আমার সামনে একটা ক্ষুধার্ত কুকুরকে দেখলাম যেও বসে রয়েছে না
খেয়ে তখন আমি আমার খাবারটা তাকে খাইয়ে দিলাম। এবং সেই দিনটা উপবাস করে আমার চলল।
তখন জমদূত ওই দিনমজুরকে খুবই সম্মান সঙ্গে স্বর্গলোকে নিয়ে চললেন।
তাহলে আমরা এই গল্পে এই
শিক্ষা পায় যে নিঃস্বার্থভাবে করা একটাই ভালো কর্ম আপনার জীবনের সমস্ত পাপকেও
ধুয়ে ফেলতে পারে তাই বন্ধুরা যখনই সময় পাবেন নিঃস্বার্থভাবে ভাল কর্ম করে যাবেন।