এক পেটুকের সাথে রামজীর স্বয়ং দর্শনের গল্প | যখন ভগবান রাম দেখা করল তার ভক্তের সাথে
গল্পটি হচ্ছে আজ থেকে ঠিক 60 বছর আগে বিহারে ঘটে যাওয়া এক অলস ও খাদ্যপ্রিয় ব্যক্তির সাথে, তিনি শুধু সারাদিন খেতেই ভালবাসতেন। তার কাছে খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া আর অন্য কোন কাজ ছিল না। পরিবারে তার তিন ভাই ছিল যারা প্রতিদিন পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে সংসারে কাজে লাগাতো এভাবেই তাদের সংসার চলত।
তিনি বড় ভাই হওয়া শর্তেও তার কাজের বয়স পেরিয়ে যেতে থাকে তবুও তিনি কাজের দিকে আর তাকায় না খাই আর বাড়িতে ঘুমাই এইভাবে তার জীবন যাপন চলতে থাকে, একদিন তার ভাইয়েরা সিদ্ধান্ত নেয় যে তার দাদা এত কুড়ে হওয়ার দরুন কোন কাজ করে না তাদের ওপর সংসারের সমস্ত বোঝা চেপে যাচ্ছে এভাবে সংসার চালানো তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই তারা সেই সময় তার দাদাকে বললে তুমি কাজে যাবে নয়তো এখান থেকে চলে যাও দূরে কোথাও যেখানে তুমি এইভাবে খাবার পাবে ও শুয়ে বসে দিন কাটাতে পারবে।
এরপর তার বাড়ির সকলেই তাকে এইভাবে চাপ দিতে থাকলে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং দূরে এক গ্রামের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে পথে দেখলেন একটা আশ্রম রয়েছে যেখানে অনেক সাধুরা মিলে যোগ ও সাধনা সিদ্ধি লাভ করার তাগিদে ভগবানের ধ্যানে মগ্ন রয়েছে। তিনি সেখানে বেশ কিছু সময় ধরে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন এবং সকলের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন। তারা হয়তো এখানে প্রচুর পরিমাণে খাবার খেতে পারে তার জন্য তাদের স্বাস্থ্য শরীর এতটা ভালো রয়েছে। এবং সে তখন সিদ্ধান্ত নেয় যে তিনি এই আশ্রমেই এই সাধুগুলোর সাথেই সময় কাটাবে যখন তারা সকলে ধ্যান জব কার্য সম্পন্ন করে আশ্রমের দিকে যেতে থাকে তখন ওই ব্যক্তিটি তাদের জিজ্ঞাসা করে হে প্রভু আপনারা কি আমার ওটা করবেন, আশ্রমের প্রধান সাধু তখন তাকে বলে আমরা তোমাকে কি সাহায্য করতে পারি?
তখন ওই ব্যক্তিটি তাদের চিকিৎসা করে আপনি কি আমাকে আপনার শিষ্য বানাবেন আমি আপনার কাছে সারা জীবন থেকে শিক্ষা অর্জন করতে চাই। তখন ঐ সাধুটি তাকে বলল হ্যাঁ, তুমি আমার শিষ্য হতে পারবে তবে তোমাকে অবশ্যই আমাদের নির্দেশ পালন করে চলতে হবে। তখন ওই ব্যক্তি বললো হ্যাঁ, আমি পারবো গুরুদেব। এবার গুরুদেবটাকে তার আশ্রমের ভেতর নিয়ে গেল এবং তাকে তার থাকার জায়গা দেখিয়ে দিল তোমাকে এখানেই থাকতে হবে এবং আমাদের গোসালা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে এবং আমরা যে সমস্ত কাজগুলি করি তোমাকেও আমাদের মত রীতিনীতি পালন করে এই সমস্ত কাজগুলি করতে হবে।
পরদিন সকাল থেকেই তাদের কাজকর্ম শুরু হয়ে গেল প্রতিদিনের মতো তিনি সেখানে বেশ ভালোভাবেই সময় কাটাতো খাবারদাবার পেতো এবং তাদের সাথে ভগবানের নামে ধ্যান কীর্তন করত। এমন করে বেশ কিছুদিন চলে যাওয়ার পর হঠাৎ করে এলো "একাদশী" সেই দিন আশ্রমে আর রান্নাবান্না কিছুই হয় না। সকাল থেকে তিনি দাঁড়িয়ে দেখলেন তার রান্নাঘরে রাঁধুনি কিন্তু আর কাজ করছে না, শীতের সময় ছিল তাই সকলে মিলে বাইরে রোদ পোয়াচ্ছিল। তখন তিনি গিয়ে গুরুদেব কে জিজ্ঞাসা করেন হে গুরুদেব আজকে কি আমার পেটে অন্য জুটবে না আমি কি খাবার খেতে পারব না। প্রেম করবে যাকে সকাল থেকে দেখছি যে রামলাল দাদা বাইরে রয়েছে, তবে আজকে হাঁসেলকে সামলাবে। গুরুদেব তখন তাকে বলেন আজকের দিন রামলাল ছুটি নাই আজকে আমাদের আশ্রমে কোন রান্নাবান্না হয় না। আমরা সকলে আজকের দিনে একাদশী পালন করি আমরা শুধু ফল খেয়েই দিন কাটায়।
এই কথা শুনে ওই ব্যক্তিটি বেশ ক্রুদ্ধ হল এবং গুরুদেব কে বলল গুরু দেব আমি তো না খেয়ে থাকতে পারবো না আমার পেটে প্রচুর যন্ত্রণা করছে, আপনি চাইলে আমাকে কিছু রান্না করার ব্যবস্থা করে দিন। গুরুদেব বলল না এটা আমি তোমার জন্য করে দিতে পারব না। এই কথা শুনে ওই ব্যক্তি বলল আমি না খেয়ে থাকলে হয়তো পরের একাদশীর জন্য আপনার সামনে আর উপস্থিত হতে পারবো না আমার জীবনটা এই ভাবেই চলে যাবে।
তখন গুরুদেব বলল তোমার যদি এত বড়ই সমস্যা হয়ে থাকে তবে আমি তোমাকে সমস্যার সমাধানের একটি উপায় দিয়ে দেব, তখন গুরুদেব রাধুনী রামলালকে বলে তুমি তাড়াতাড়ি হেশেল থেকে খাদ্য উপার্জন করার মতো সামগ্রীগুলো ওকে দিয়ে দিন, এবং সমস্ত বস্তুগুলি নিয়ে ওই ব্যক্তিকে বললেন তুমি আমাদের আশ্রমের ভেতর রান্না করতে পারবে না তবে হ্যাঁ তুমি যদি আমাদের এই সমস্ত সামগ্রী গুলি নিয়ে ওই নদীর পাড়ে বসে নদীর জল খেয়ে এবং এই বস্তুগুলি দিয়ে খাদ্য উপার্জন করে নিজে খেতে পারো তবে তুমি এই কাজটি করতে পারবে, আমাদের আশ্রমে তো রান্না করে দেওয়ার ব্যবস্থা তোমাকে করে দেওয়া যাবে না তোমার প্রাণ টুকু বাঁচানোর জন্য আমি এই পন্থা অবলম্বন করে দিচ্ছি তোমার জন্য তবে অবশ্যই কিন্তু খাওয়ার আগে তুমি প্রভুর নাম জব করে তার জন্য খাবার রেখে তুমি খেতে বসবে।
এই কথা শুনে ঐ পেটু ব্যক্তিটি নদীর ধারে চলে গেলেন এবং খাদ্য সামগ্রী বানিয়ে ফেললেন এবং খাওয়ার আগে তিনি দুখানা খাবার পাত্র আয়োজন করলেন যেখানে তিনি প্রভুর জন্য একটি খাবার আলাদা করে রাখলেন এবং তার জন্য একটি খাবার আলাদা করে রাখলেন এবার গুরুদেবের কথা অনুযায়ী তিনি প্রভুর নাম ধরে ডাকতে থাকলেন এমন করতে করতে, বেশ কিছুটা সময় চলে গেল তবুও তিনি চিন্তিত যে কেন প্রভু তার সামনে আসছে না, প্রভু যেত আর সামনে না আসলে তিনি এই খাদ্যদ্রব্য নিজে খেতে পারবে না এটা গুরুদেবের আদেশ ছিল। এইভাবে সময় কেটে গেল এক সময় এলো যখন তিনি দেখলেও চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। হঠাৎ করে দেখল বনের ভেতর থেকে রাম ও সীতা দুজনে মিলে তার দিকে ছুটে আসছে, তখন তিনি বললেন হে প্রভু আপনি চলে এসেছেন তবে আপনাকে তো আমি একা আসতে আমন্ত্রণ করেছিলাম আপনি কেন সঙ্গে আর একজনকে নিয়ে আসলেন।
ঠিক আছে আপনি যখন এসে গেছেন তখন আপনি আমার এই প্রসাদ টুকু গ্রহণ করুন। আপনাকে আমি তো একা আসতে বলেছিলাম আপনি কেন সঙ্গে আরেকজনকে নিয়ে আসলেন এতে আমার খাদ্যের অভাব ঘটবে যে প্রভু আজকের দিনে। যাহোক এসেছেন তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন রাত হয়ে যাচ্ছে আমারও আশ্রমের দিকে যেতে হবে। রীতিমতো তারা দুজন মিলে সমস্ত খাবার খুব ভালো করে ভক্তির সাথে খেয়ে নিলেন। তারপর তারা দুজনে আবার বোনের দিকে যেতে লাগলেন। তখন বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ব্যক্তিটি বললেন প্রভু আপনি পরের একাদশীতে কি একাই আসবেন, তখন প্রভু শ্রী রাম তাকে বললেন হ্যাঁ আমি চলে আসবো তোমার কোন অসুবিধা নেই ঠিক টাইমে চলে আসব।
এমন করে দিন কাটতে থাকল ঠিক আবার ১৫ দিন পর যখন একাদশী এলো তখন ওই পটু ব্যক্তিটি গুরুদেব কে বলছেন হে গুরুদেব আপনি আমাকে একটু বেশি করে খাদ্য সামগ্রী ব্যবস্থা করে দিন কেননা আপনি বলেছিলেন প্রভু একা আসবে কিন্তু তিনি কখনো একা আসে না সঙ্গে কাউকে নিয়ে আসে তাই আপনি আমাকে তিনজনের খাদ্যর ব্যবস্থা করে দিন। তখন গুরুদেব তার কথা অনুযায়ী তিনজনের খাদ্যের সরঞ্জাম তাকে দিয়ে দিলেন, প্রথমবারের মতো তিনি এবারও কিন্তু তিনি সেখানে বসে খাদ্য উৎপাদন করলেন প্রভুকে ডাকতে থাকলেন আপনি আসেন প্রভু আপনি আসলে আমি খেতে পারব না আপনি একটু তাড়াতাড়ি আসেন। কিছুক্ষণ বাদেই রাম লক্ষণ ও সীতা তিনজন মিলে তার কাছে চলে এলেন এবার প্রভুকে দেখে ওই পটু ব্যক্তিটি মনে মনে একটু রেগে গেলেন আগেরবার এসেছিল দুজন আমি তিনজনের খাদ্যের আয়োজন করলাম যাতে আমার খাদ্যটাও বেঁচে যাই এবং আমি খেতে পারি এ তো দেখছি তিনজন মিলে আপনারা এসেছেন। ঠিক আছে যখন এসে গেছেন তখন খেয়ে নিন গুরুদেবের কথা অনুযায়ী আপনাদেরকে খেতে না দিলে আমার অসুবিধা হবে।
তখন তারা দেশ ভক্তির সাথে ওই তার তৈরি করা খাদ্য ধীরে ধীরে তারা বোনের দিকে যেতে লাগলেন যাওয়ার পথে তিনি প্রভুর সিরাম কে জিজ্ঞাসা করলেন প্রভু আপনি কি পরেরবার একা আসতে পারবেন নাকি তিনজন আসবেন আমাকে একবার বলে দিন যাতে আমি আপনাদের খাদ্যদ্রব্য অগ্রিম ব্যবস্থা করে ফেলতে পারি। তখন প্রভু শ্রীরাম তাকে বললেন তোমার চিন্তা করতে হবে না আমি ঠিক সময় চলে আসব কোন অসুবিধা হবে না তোমার।।
আশ্রমে যাওয়ার পর গুরুদেব তাকে জিজ্ঞাসা করল আজকের একাদশী তোমার কেমন কাটলো, পেটু ব্যক্তিটি তখন গুরুদেবকে বললেন গুরুদেব আমার একাদশীতে অভুক্তই থাকতে হয় কোন বার আমার খাদ্য জোটেনা কপালে। এইভাবে যেতে যেতে যেতে আবার একাদশী চলে এলো। এবারও তিনি গুরুদেবের কাছে গেলেন এবং বললেন গুরুদেব আমাকে একটু বেশি করে খাদ্য সামগ্রী তৈরি করার ব্যবস্থা করে দিন যাতে আমি প্রভুদের দলের তিনজনের খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে ফেলতে পারি আপনি আমাকে চারজনের খাবার প্রস্তুত করার ব্যবস্থা করে দিন।
গুরুদেব একটু রেগে গেল এবং মনে মনে ভাবল এ হয়তো ঠিকই এই খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত স্কয়ার বস্তুগুলি বাজারে বিক্রয় করে এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি খেয়ে আশ্রমে আসে। এইভাবে যেতে যেতে তিনি ভাবল আজকে আমি ওকে হাতে নাতে ধরবো আমি ওর পিছন পিছন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে নদীর পাড়ে যাব। গিয়ে দেখব সে কি করে। এবার ওই পটু ব্যক্তিটি ভাবল এবার আগে প্রভুকে ডেকে নি, তারপর খাদ্য প্রস্তুত করার ব্যবস্থা করব। রীতিমতো তিনি প্রভুর নাম ধরে ডাকতে থাকে হে প্রভু শ্রী রাম দর্শন হন, আপনি আমার সামনে প্রকট হন, আপনি না আসলে আমি খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করতে পারবো না। ডাক শুনতে কিছুক্ষণের মধ্যে সিরাম চলে এলো তার সামনে। হ্যাঁ তবে তিনি এলো একা নয়, এলো হনুমান, জুমানজি, আঙ্গাত, লক্ষণ সীতা, ও ভরতকে সাথে করে নিয়ে। এ দেখে ওই পটু ব্যক্তিটি খুবই রেগে গেলেন এবং বললেন যতক্ষণ আপনারা এখানে চলে এসেছেন, তো আপনাদের খাদ্য সামগ্রী আমি দিয়ে দিচ্ছি এবার আপনারা আজকে বানিয়ে নিজেরা খান। আমি এখানে ঘুমিয়ে রইলাম। রীতিমতো সিতা-মাতার হাতের খাবার খাবার জন্য স্বর্গ থেকে অনেক দেবী দেবতারা সেখানে উপস্থাপন হলেন এবং তার খাদ্য গুলি সকলে মিলে খেলেন।
এমন সময় গুরুদেব সেখানে উপস্থিত হন। এসে তিনি দেখেন ওই ব্যক্তিটি ওখানে শুয়ে রয়েছে, তিনি তাকে ডেকে তোলেন এখানে কি হচ্ছে এইসব, তখন তিনি বলেন গুরুদেব দেখুন এদের জন্য খাদ্য আয়োজন করতে করতে আমি কোন একাদশীতেই আমার কপালে কোন খাদ্যদ্রব্য জোটে না আপনি দেন ঠিকই কিন্তু শববার এরাই খেয়ে চলে যায়।
তখন গুরুদেব তাকে বলল তুমি কি এগুলি রহস্য করছ আমার সাথে নাকি কোন অভিনয় চলছে তোমার আমাকে এমন নাটক দেখিও না। তুমি ওই খাদ্য দ্রব্যগুলি নিয়ে কিছু বানিয়ে কিছু করেছ আর আমাকে এইসব কথা বলছো। এ কথা শুনে ওই পটু ব্যক্তিটি দৌড়ে প্রভু সিরাম এর কাছে গেলেন গিয়ে বললেন হে প্রভু আপনি দর্শন দিন নয়তো যে এই খাদ্য সামগ্রী গুলি আমাকে দিয়েছে সে আমাকে ভুল ভাবছে। তখন প্রভু সিরাম তাকে বললেন তুমি তোমার সরলতার জন্য আমার দর্শন পেয়েছ। তুমি আমার কাছ থেকে কোনোটি কিছুই চাওনি, শুধুমাত্র খাদ্য খাবার জন্য আমাকে এখানে ডেকেছিলে, তাই আমি তোমায় দর্শন দিয়েছি তবে তোমার মত তোমার গুরুদেব যদি আমাকে এইভাবে ডাকতো তবে আমি তার সামনে অবশ্যই উপস্থিত হতাম। তোমার গুরুদেব তার মনের ভেতর অনেক কল্পনা চেপে রেখে আমায় ডাকতেন। আমি সেই সময় তার মনের চাহিদা পূরণ করতে পারব না এভাবেই আমি তাকে কখনো দেখা দিতে পারিনি যদিও তিনি অনেক বেশি দিন ধরে আমার সাধনা করছেন।
গুরুদেবের কাছে গিয়ে তখন ওই ব্যক্তিটি এই কথাগুলি বললেন যে গুরুদেব আমাকে প্রভু এই কথাটি বললেন গুরুদেব তখন এই কথা শুনে কেঁদে দুই চোখ ভাসিয়ে দিলেন, এবং তার এই কান্না দেখে প্রভু শ্রী রাম আর থাকতে পারলে না তখন তিনি গুরুদেব কে দর্শন দিতে বাধ্য হলেন। আর তখন গুরুদেব ওই পটু ব্যক্তিদের জন্য প্রভু সিরামের দর্শন পেয়ে গেলেন।